প্লাস্টিকের বিকল্প এখন ডাবের পানি!

ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা করে, তবে ইন্দোনেশিয়ায় সেই পানি ফেলে দেওয়া হয়। এবার সেই বর্জ্য থেকে বায়োপ্লাস্টিক তৈরির উদ্যোগ চলছে। বড় আকারে উৎপাদন সম্ভব না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে সেটি কাজে লাগানো হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার মতো ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশে নারকেলের অভাব নেই। প্রতি বছর সে দেশে ১ হাজার ৫৫০ কোটি নারকেলের ফলন হয়। তবে নারকেলের সব সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। যেমন বর্জ্য হিসেবে ডাবের পানি ফেলে দেওয়া হয়।

কিন্তু লিনিয়োসেলুলসিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে মির্থা কারিনা সানকোইয়োরিনি ডাবের পানি কাজে লাগিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘সেলুলোজ ও লিগনিন প্লাস্টিক তৈরির দুই প্রধান উপাদান। বর্তমানে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। একবার ব্যবহার করলে প্লাস্টিক সহজে প্রকৃতির মধ্যে ধ্বংস করা যায় না।

প্রচলিত প্লাস্টিকের তুলনায় ডাবের পানি দিয়ে তৈরি বায়োপ্লাস্টিক ছয় মাসের মধ্যে প্রকৃতিতে আবার মিশে যেতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। বায়োপ্লাস্টিকের উপকরণ হিসেবে সেলুলোজ পেতে হলে অ্যাসেটোব্যাকটার সাইলিনিয়াম নামের ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ব্যবহার করে ডাবের পানি সবার আগে ফারমেন্ট বা গাঁজানো হয়৷ ‘নাতা দে কোকো’ নামের আঠালো স্তর হওয়া পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চালাতে হয়।

মির্থা বলেন, এই সেলুলোজ, সেটির কাঠিন্য, সেটির নমনীয়তা ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠার সময়ের উপর নির্ভর করে। কাঁচামাল হিসেবে ব্যাকটিরিয়া বেড়ে ওঠার জন্য কতটা কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন লাগবে, সেটা জানাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডের সাত গবেষকের করা এই গবেষণা বলছে, সমুদ্রের প্রায় ৮০ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য আসে পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি নদী থেকে। এর একটি বড় অংশ আসে এশিয়ার নদীগুলো থেকে।

প্রচলিত প্লাস্টিকের মতো গঠনগত বৈশিষ্ট্য পেতে হলে জেল বা আঠালো পদার্থ থেকে পানি দূর করতে হবে। ভ্যাকুয়াম দিয়ে সেই কাজ করা যায়৷ শুকিয়ে ফেলা ‘নাতা দে কোকো’ খুবই মজবুত হওয়ায় সেটিকে বায়োপ্লাস্টিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

তবে ডাবের পানির মধ্যে সেলুলোজের মাত্রা কম হওয়ায় উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণও অত্যন্ত কম। ফলে বড় আকারে প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য সেটি উপযুক্ত নয়। মির্থা বলেন, ‘এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত সেলুলোজের মাত্রা মাত্র পাঁচ শতাংশ। সে কারণে এই প্রক্রিয়ায় থেকে শপিং ব্যাগের মতো পণ্যের জন্য প্লাস্টিক তৈরি করা তেমন লাভজনক নয়। তার জন্য বিশাল পরিমাণ সেলুলোজের প্রয়োজন। তাই এই বায়োপ্লাস্টিকের অন্য ব্যবহার হয়। যেমন অত্যন্ত দামী মোড়ক বা অন্যান্য কাজে সেটি প্রয়োগ করা হয়।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে।